শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন

কুড়িগ্রামে স্ত্রীকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা: ১২ ঘন্টার মধ্যে ঘাতক স্বামী গ্রেফতার

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:: কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে স্ত্রীকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ১২ ঘন্টার মধ্যে ঘাতক স্বামীকে পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কুড়াল উদ্ধার করা হয়।

জানা গেছে, গত ২১ জানুয়ারি ভোর রাতে নাগেশ্বরী পৌরসভার কবিরের ভিটা নামক গ্রামে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী সত্য চন্দ্র শীল (৫০) তার স্ত্রী লতা রানী (৪০)কে মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নৃশংসভাবে গলায় কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। ঘটনার সংবাদ পেয়ে নাগেশ্বরী থানা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়ে ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে প্রকাশ্য ও গোপন অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখে। অভিযানের একপর্যায়ে নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ রুপ কুমার সরকার, পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত সরোয়ার পারভেজ ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই প্রভাত রঞ্জন রায় সহ একটি চৌকস টিম গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে আসামী লালমনিরহাটের সীমান্তবর্তী এলাকা লোহাকুচি বর্ডার হয়ে পালানোর চেষ্টা করছে।

এমতাবস্থায় ঘটনার ১২ ঘন্টার মধ্যে পলাতক ঘাতক স্বামী সত্য চন্দ্র শীলকে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থানাধীন পলাশী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বড়াইবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানায়, হত্যাকান্ডে আসামী কর্তৃক ব্যবহৃত কাঠের হাতলযুক্ত রক্তমাখা ধাঁরালো কুড়াল ও আসামীর পরিহিত সাদা রংয়ের রক্তমাখা সুইটার ঘটনাস্থল হতে উদ্ধার করা হয়েছে। নাগেশ্বরী পৌরসভাধীন জিকো সিনেমা হলের উত্তর পাশে কামারপাড়া নামক স্থানে আসামীর সেলুনের দোকান রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই হত্যাকান্ডের ৩টি ক্লু-নিয়ে তদন্তকারী পুলিশ অফিসার কাজ করছে। তার মধ্যে একটি হলো পূর্বের অর্থ ঋণ, দুই হতাশা বা ডিপ্রেশন এবং তৃতীয়টি হলো ড্রাগ বা বিভিন্ন পিলের প্রভাবে গত ২০ জানুয়ারি আসামী শ্রী সত্য চন্দ্র শীল সেলুনের কাজ করে রাত ৯ ঘটিকার সময় বাড়ীতে এসে স্ত্রীর সাথে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আসামী সত্য চন্দ্র শীলের দুই ছেলে শ্রী সোহাগ চন্দ্র শীল (২৫) ও শ্রী সাগর চন্দ্র শীল (১৭) রাতের খাবার খেয়ে রাত ১১টার সময় নিজ নিজ শয়ন ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে।

২১ জানুয়ারি রাত ২টা ৩০ মিনিটে আসামী সত্য চন্দ্র শীলের ঘুম ভেঙ্গে গেলে সে ঘুম থেকে উঠে ঘরের মধ্যে টেবিলের উপর রাখা কাঠের হাতল যুক্ত ধাঁরালো কুড়াল হাতে নিয়ে খাটের উপর ঘুমিয়ে থাকা তার স্ত্রী লতা রানী শীলের গলায় পরপর দুটি কোপ মারলে ভিকটিম লতা রানী শীল ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন। পাশের কক্ষে শুয়ে থাকা ছোট ছেলে সাগর শীল (১৭) তার মা-বাবার শয়ন ঘরে শব্দ শুনতে পেয়ে ঘরে প্রবেশ করে দেখতে পায় তার মা ভিকটিম লতা রানী খাটের উপর রক্তাক্ত ভাবে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ছোট ছেলে সাগর শীল তার বড় ভাইকে চিৎকার করে ডাক দিলে বড় ভাই সোহাগ শীল (২৫) বাবা-মার শয়ন ঘরে এসে তার মাকে খাটের উপর রক্তাক্ত ভাবে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পায়। তাদের দুই ছেলে আশপাশের লোকজনকে ডাকলে আসামী সত্য শীল ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আত্মগোপন করে। এই সংক্রান্তে নাগেশ্বরী থানার মামলা নং-১৫, তারিখ-২১/০১/২০২৪ ইং, ধারা-৩০২ পেনাল কোড-১৮৬০ রুজু করা হয়।

পুলিশ সুপার আল আসাদ মো: মাহফুজুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে আসামীকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলায় সংগঠিত সকল অপরাধীকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে পুলিশ। যেকোন অপরাধ নির্মূলে কাজ করছে পুলিশ সদস্যরা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com